থানায় সাধারণ ডায়েরী বা জিডি করার নিয়মঃ

ব্যক্তিগতভাবে কোন সমস্যার সমাধান না করা গেলে আইনী সহায়তার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন কারণে থানায় ডায়েরী করা যায়। পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় অনেকে থানায় যেতে চান না বা সাহস করেন না। থানায় অভিযোগ করতে হলে তা নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করে লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডিউটি অফিসারের সহায়তা নেয়া যাবে। অভিযোগের একটি কপি থানায় সংরক্ষিত থাকবে এবং আরেকটি অভিযোগকারী নিজের কাছে রাখবেন।

যে সমস্ত কারণে জিডি করা যেতে পারে?

  •  আপনাকে বা আপনার পরিবারকে কেউ হত্যা বা ক্ষতি করার হুমকি দিল। আপনি ভয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
  •  আপনার কোন মূল্যবান জিনিস, কাগজপত্র বা কোন দলিল হারিয়ে গেছে।
  •  কোন ধর্তব্য অপরাধ সংঘটিত হতে যাচ্ছে, যা আপনি জেনে ফেলেছেন।
  •  আপনার পরিচিত কেউ নিখোঁজ রয়েছেন। আপনি কী করবেন?

এ সব ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে নিকটবর্তী থানাকে জানানোর দায়িত্ব আপনার। আর এটি জানাবেন একটি সাধারণ ডায়েরীর মাধ্যমে, যাকে আমরা সংক্ষেপে জিডি বলে থাকি। এ ধরণের জিডি করার অথ্য হলো বিষয়টি সম্পর্কে থানাকে জানানো, যাতে থানা কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে পারে। আবার অপরাধ সংঘটিত হলেও সহজেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। জিডি কোন এজাহার বা মামলা নয়। এটি একটি ঘটনার বিবৃতি। তবে অপরাধ সংঘটিত হলে আগে করা জিডি অনেক সময় এজাহারে রূপান্তরিত হতে পারে। এ ধরণের জিডি কোন এজাহার বা মামলার সমর্থনমূলক দলিলগত সাক্ষ্য হিসেবে অপরাধীর বিরুদ্ধে গৃহীত হয়ে থাকে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে একটি জিডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান দলিল।

সাধারণ ডায়েরী (জিডি) কেন জরুরিঃ

কখনো কোন হুমকির মুখোমুখি হলে বা কোন কিছু হারিয়ে গেলে অনেকেই থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরী বা জেনারেল ডায়েরী(জিডি) করার কথা ভাবেন। কিন্তু থানায় গিয়ে কীভাবে জিডি করতে হয়, তা অনেকেই জানেন না। জিডি বা জেনারেল ডায়েরীকে বাংলা করলে দাঁড়ায় কোন বিষয়ে সাধারণ বিবরণ। এই আইনি সহায়তা পেতে আপনার সমস্যার বিবরণ লিখিতভাবে থানায় জমা দিতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক যে কোন ব্যক্তি থানায় এটি করতে পারেন।

যে সব কারণে জিডি করতে পারবেনঃ

বিভিন্ন কারণে জিডি করা হয়। যেমন কেউ ভয় দেখালে বা হুমকি দিলে, আপনি যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলে থানায় জিডি করতে পারেন। শুধু তাই নয়, কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলে জিডি করা যায়। এ সবের বাইরেও কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষা সক্রান্ত সনদ, দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলে জিডি করা যায়। এ ছাড়া কেউ কারো সম্পদের ক্ষতি করলে বা বিভিন্ন প্রাণ নাশের হুমকি দিলে, দলিল হারিয়ে গেলে, বাসার কেউ নিখোঁজ হলে বা পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে জিডি করার দরকার হয়। জিডি করা জরুরি। কারণ আপনি যদি খারাপ কোন কিছু আশঙ্কা করেন, ধরুন কেউ আপনার উপর হামলা করতে পারে বা ক্ষতি করতে পারে, তাহলে জিডি করা হলে ওই ঘটনার পর দোষী ব্যক্তিকে সনাক্ত করা সহজ হয়। তাছাড়া হারানো জিনিস খুজে পেতেও আপনার জিডি সহায়ক হয়ে উঠে পুলিশের জন্য। আইনি সহায়তার জন্য জিডি খুবই কার্যকর একটি পদক্ষেপ।

কোথায় এবং কিভাবে করবেনঃ

জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করা উচিত। নিজের এলাকার থানাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তবে ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এক থানায় আর জিডি করছেন অন্য থানায়, এমনটি হওয়া উচিত নয়। কেননা এতে আইনি সহায়তা নিতে ঝামেলা হয়। জিডি করতে হয় দরখাস্ত আকারে। দরখাস্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বরাবর। নিচে থাকবে থানার নাম। বিষয় হিসেবে উল্লেখ করতে হবে যে ব্যাপারে জিডি করতে চান তার নাম। বিবরণ অংশে আপনাকে বিস্তারিত লিখতে হবে। অবশ্যই আপনাকে আশঙ্কার কারণ, যার জন্য আপনি আতঙ্কিত বা যে হুমকি দিয়েছে, তার নাম, ঠিকানা, হুমকির স্থান, তারিখ উল্লেখ করতে হবে। কিছু হারিয়ে গেলেও সেটার বিস্তারিত বিবরণ এবং পারলে তার কোনো নমুনা, যেমন ছবি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবেন। সব শেষে নিচে আপনার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে দেবেন। যদি কোন বিষয়ে এখনই কোন মামলা না করতে চান, তাহলে জিডিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে যে এ বিষয়ে আপাদত কোন মামলা করবেন না। তবে মনে রাখবেন, পুলিশ যদি মনে করে যে কোন মারাত্মক অপরাধ ঘটছে, তাহলে জিডি থেকেও মামলা হতে পারে।

মনে রাখবেনঃ

মনে রাখবেন, জিডি করতে যে কোন পরামর্শের জন্য সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাঁকে লিখে দিতে অনুরোধ করুন এবং এজন্য কোন অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আবেদনের একটি কপিতে জিডি নম্বর, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সীল লাগিয়ে আপনাকে দেওয়া হবে এবং জিডিটি নথিভূক্ত করা হবে। কপিটি আপনি নিজের জন্য সংরক্ষণ করবেন। জিডি হওয়ার পর কর্তব্যরত কর্মকর্তা জিডির অনুলিপি থানার ওসির কাছে পাঠাবেন। জিডিটি যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন বিষয়ে হয়, তবে থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা আবেদনকারীকে অবহিত করবে।

অনলাইনে জিডিঃ

আপনার যদি তাৎক্ষণিক পুলিশকে প্রয়োজন না হয় বা আপনার যদি থানায় যেতে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে অনলাইনেও জিডি করতে পারবেন। সরাসরি পুলিশ সদর দপ্তরে ফ্যাক্স ও ই-মেইলও করতে পারেন। দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। ভিজিট করুন www.khagracharipolice.gov.bd  সাইটে । সেখানে ক্লিক করুন citizen help request বিভাগে।